ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "জলবায়ু অভিযোজন, নিরাপদ নৌপরিবহন, ব্লু ইকোনোমি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি।" তিনি বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে ৪টি সমুদ্র বন্দর যার মধ্যে ১টি গভীর সমুদ্র বন্দর (মাতারবাড়ী) ও ৫৪টি অভ্যন্তরীণ নৌ বন্দর রয়েছে। মাতারবাড়ীতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া ফিশারি পোর্ট প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব পেলে সরকার তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিবে।
দেশের সমুদ্র এলাকার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত সেবাদানের মাধ্যমে নিরাপদ নেভিগেশন ও সামুদ্রিক অর্থনীতির বিকাশে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভবিষ্যতে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশাব্যক্ত করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
সেমিনারে বক্তারা পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা স্বায়ত্তশাসিত ডুবোযান ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমুদ্রতল ম্যাপিং ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘Seabed Mapping: Enabling Ocean Action’, যা একটি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে হাইড্রোগ্রাফির উল্লেখযোগ্য ভূমিকাকে নির্দেশ করে। সমুদ্রে দেশি-বিদেশি জাহাজসমূহের নিরাপদ চলাচল, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই আহরণ ও কার্যকরী ব্যবহারে হাইড্রোগ্রাফিক তথ্য-উপাত্ত মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে সমুদ্র ব্যবস্থাপনা এবং ব্লু ইকোনোমির নিমিত্তে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমুদ্রতলের পরিবর্তন, অফ-শোর অ্যাকুয়াকালচার এবং মৎস্য উৎপাদনশীলতা, সামুদ্রিক জিনগত সম্পদ বৃদ্ধি এবং সমন্বিত মহাসাগর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে সমুদ্রতলের মানচিত্রায়ণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
বক্তারা আলোচনার মাধ্যমে দিবসটির প্রতিপাদ্য ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। হাইড্রোগ্রাফিক তথ্য-উপাত্তের প্রায়োগিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের নিরাপদ, টেকসই ও কার্যকর উপযোগিতার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়।
এছাড়াও, বিভিন্ন মেরিটাইম সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণে হাইড্রোগ্রাফিক কর্মকান্ড নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সমুদ্র বিজ্ঞানী, সমুদ্র ব্যবহারকারী সংস্থা ও দেশসমূহের মাঝে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে জ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন হবে বলে আশা করা যায়।
২০০১ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার ৭০তম দেশ হিসেবে সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার দেশীয় প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৮৩ সাল হতে সমুদ্র ও সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন নদীপথে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নটিক্যাল চার্ট প্রকাশের দায়িত্ব পালন করে আসছে। কাগজে মুদ্রণের পাশাপাশি এ সকল চার্ট ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেও প্রকাশিত হচ্ছে, যা বঙ্গোপসাগরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জাহাজসমূহের নিরাপদ চলাচলে অপরিহার্য। হাইড্রোগ্রাফিক তথ্য-উপাত্ত সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা, মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সুনামী, উপকূলীয় ভূমি ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
এ সকল তথ্য-উপাত্ত অদূর ভবিষ্যতে মেরিন স্পেশিয়াল ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রস্তুতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। হাইড্রোগ্রাফি সংক্রান্ত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহ সমুদ্র অঞ্চলকে আরও নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনশীল ভূমিকায় উন্নীত করতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, জাতীয় হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বক্তব্য প্রদান করেন। সেমিনারে কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালন) গ্রেড-২ জনাব ডঃ জিয়াউল ইসলাম, সদস্য (অর্থ) ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) জনাব কাজী ওয়াকিল নওয়াজ, পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) এ,কে,এম আরিফ উদ্দিন, পরিচালক (হাইড্রোগ্রাফি) বেগম সামসুন নাহার, কর্তৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ সমুদ্র গবেষণা, হাইড্রোগ্রাফি, ওশানোগ্রাফি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণা পরিচালনাকারী ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: আইএসপিআর, নৌমন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ।